গতকাল শনিবার (৩ এপ্রিল ২০২১) একটি রহস্যজনক সড়ক দুর্ঘটনায়ই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে।রাজধানীর হাতিরঝিলে একটি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উঠে গেছে সড়কদ্বীপে। এতে গাড়ি ও গাড়িটির চালকের সামান্য ক্ষতি হলেও ঘটনায় মারজান ঝিলিক আলম (২৩) নামে তরুণী। তরুণী আরোহীকে পুলিশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত তরুণীর দেহে দুর্ঘটনায় আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি; পাওয়া যায় ভিন্ন ধরনের নির্যাতনের আঘাতের চিহ্ন।এমন আলামত দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে পুলিশ দম্পতির গুলশানের বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করে।
সেখানে দেখা যায়, বাড়ি থেকে চারজন মিলে সেই গৃহবধূকে বের করে গাড়িতে তুলেছে। পরে তার স্বামী বলেন, অসুস্থ স্ত্রীকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে!
ঝিলিকের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, বাড়িতেই নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে।এ ঘটনায় স্বামী সাকিবুল আলম (৩৫) ও তাঁর বাড়ির এক গৃহকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তারাও বলছেন, বাড়িতেই ঝিলিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এরপর দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়ে হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।ঝিলিক কী কারণে এবং কিভাবে অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। দুর্ঘটনার বিষয়টিও ভীষণ রহস্যজনক। এ ঘটনায় সাকিবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘ শনিবার (৩ এপ্রিল ২০২১) সকাল ১০টার দিকে আমবাগান এলাকায় একটা প্রাইভেট কার ফুটপাতে উঠে গেছে খবর পেয়ে সেখানে যান তিনি ।(এসআই) গোলাম কুদ্দুস কাছে গিয়ে দেখেন পেছনের সিটে একজন নারী শুয়ে আছেন। তখন সাকিব বললেন তাঁর স্ত্রী আহত হয়েছে। তাঁদের ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে ঝিলিককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তাঁর শরীরে দুর্ঘটনার মতো কোনো চিহ্ন নেই। সাকিব তাঁর বাড়ি গুলশানে জানালেও কী কারণে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন সেটাও পরিষ্কার করে বলেননি সাকিব । এতে পুলিশের সন্দেহ হয়।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া বলেন, ঝিলিকের পা, মাথা ও গলায় মারপিটের মতো আঘাতের চিহ্ন আছে। সন্দেহ হলে স্বামী সাকিবকে আটক করে পুলিশ । আটক করার সময় তিনি মিরপুরের এমপি মো. ইলিয়াস মোল্লা তাঁর নানা বলে জানান এবং তার পরিচয় দিয়ে বেরিয়ে যেতে চান।
সাকিবুল আলম প্রথমে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, সকালে গুলশানের ৩৬ নম্বর সড়কের বাসা থেকে বের হলে চাকা ফেটে গাড়ি ফুটপাতে উঠে যায়। এরপর ঝিলিক মারা যায়। ঝিলিকের শরীরে দুর্ঘটনার আঘাতের চিহ্ন নেই, কিভাবে মারা গেলেন? জানতে চাইলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন, ‘আমি কি জানি!’ এরপর উপস্থিত কারো কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি সাকিব ।
হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব দাবি করেন, তিনি তাঁর স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে তাঁর স্ত্রী গুরুতর আহত হন এবং তিনিও আহত হন। তাঁর হাতে ব্যান্ডেজ আছে। ঘটনাটি রহস্যজনক মনে হওয়ায় গুলশান থানার সহায়তায় বাড়িতে খোঁজ নেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুলশান থেকে মৃত অবস্থায়ই ঝিলিককে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। সাকিব ঘটনাটি লুকানোর চেষ্টা করেছেন । ঘটনাস্থল গুলশান থানা এলাকায় হওয়ায় তারাই আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ ৩৬ নম্বর সড়কের ২৩/সি নম্বর বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এ সময় তাঁর ছোট ভাই ফাহিমসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা স্বীকার করেন, ঝিলিককে বাড়ি থেকেই মৃত অবস্থায় বের করা হয়। বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করেছে পুলিশ। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সকাল ৯টা ৯ মিনিটের দিকে দুই নারী ও দুই পুরুষ মৃত অবস্থায় ঝিলিককে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে গাড়িতে তুলছেন। এর পেছনে হেঁটে যান সাকিব।
হাসপাতালে ঝিলিকের মামি মনোয়ারা বেগম বলেন, প্রায় দুই বছর আগে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান সাকিবের সঙ্গে ঝিলিকের বিয়ে হয়। তাদের আট মাস বয়সের একটি ছেলেও আছে। ঝিলিকের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। তার বাবা আনোয়ার হোসেন এক বছর আগে মারা গেছেন। মা আসমা বেগম মোহাম্মদপুরে ভাড়া বাসায় থাকেন। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে ঝিলিক দ্বিতীয়। তাঁর মা আসমা বেগম গুলশান থানায় বিলাপ করে বলেন, ‘আমার মেয়েকে ওরা মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই।’
গুলশান থানার (তদন্ত) ওসি আবুল হাসান বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। ঝিলিক কিভাবে মারা গেছেন তা যাচাই করা হচ্ছে। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় নেওয়া হবে।
অনলাইন আপডেট : ৪ এপ্রিল,২০২১
আরসিএন২৪বিডি.কম
মেরাজ হৃদয়